লালমনিরহাটে সদর উপজেলার পঞ্চগ্রামে চার সাংবাদিক এবং হাতীবান্ধায় এক সাংবাদিকদের উপর গতকাল (১২ আগস্ট) হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে জেলায় কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ।
শনিবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে লালমনিরহাট জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র মিশন মোড় চত্ত্বরে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
লালমনিরহাটের সিনিয়র সাংবাদিক আহমেদুর রহমান মুকুলের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন দৈনিক জনকণ্ঠ নিজস্ব সংবাদদাতা জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, সাপ্তাহিক আলোর মনি পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ, মাইটিভি প্রতিনিধি মাহফুজ সাজু, ফিনালসিয়াল এক্সপ্রেস প্রতিনিধি আবু হাসনাত রানা, দৈনিক প্রথম আলো প্রতিনিধি আবদুর রব সুজন, সময় টিভি প্রতিনিধি মোফাখখারুল ইসলাম মজনু প্রমুখ। এ সময় লালমনিরহাট জেলায় কর্মরত সকল সাংবাদিকবৃন্দের আয়োজনে এ মানববন্ধনে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার শতাধিক সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সচেতন মহলসহ প্রায় দেড়শ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া সাংবাদিকরা জানান, দেশ তথা রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে সমাজের উন্নয়ন, অবনতি, অসংগতি কলমের মাধ্যমে তুলে ধরাই সাংবাদিকদের প্রধান কাজ। এতে সমাজের সামজিক অবক্ষয়ের মাত্রা কমে আসাসহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ভূমিকা রাখে সংবাদকর্মীরা।
এ সময় বক্তারা বলেন, অপরাধীদের কোনো দল হয় না, শুধু অপরাধকে লুকাতে দলের আশ্রয় নিয়ে থাকে। তাই পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে লালমনিরহাটের সাংবাদিরা বর্বর হামলার শিকার হয়েছে সে হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি নিশ্চিত করা দাবি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী উর্ধতন কর্মকর্তাদের নিকট।
এ সময় হামলার শিকার দৈনিক প্রথম আলো লালমনিরহাট প্রতিনিধি আবদুর রব সুজন মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বলেন, লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতির ছেলে দুই সন্তানের জনক হয়েও অন্য একজন দুই সন্তানের জনককে নারীকে জোরপূর্বক বিয়ে করে, এ বিষয়ে সভাপতির প্রথম পুত্রবধু আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলো। এছাড়া স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের সভাপতি হওয়ার সুবাদে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আজিজার রহমান মন্ডল তার দুই ছেলেকে ঐ বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী ও পিয়ন পদে চাকুরি দিয়েছে। তাছাড়া তার নিকট আত্মীয় স্বজনদের মাঝে সরকারী সকল সুবিধা প্রদান করার বিষয়গুলো অত্র এলাকায় চাউর হলে চার সংবাদকর্মী তথ্য সংগ্রহে যায়। তথ্য সংগ্রহ করে ফেরার সময় ঐ পরিবারের অংশগ্রহণসহ একদল সন্ত্রাসী সাংবাদিকদের উপর হামলা চালায়, এতে আমি (প্রথম আলো প্রতিনিধি), যমুনা টিভির প্রতিনিধি আনিসুর রহমান লাডলা, এখন টিভির বকুল, ক্যামেরাম্যান আহসান আহত হয়। হামলাকারীরা তথ্য নিতে যাওয়া সকল সাংবাদিকদের প্রাণে মারা এবং আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। ঐ সময় পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে থাকলে প্রাণভয়ে সকলকেই স্থান ত্যাগ করে হাসপাতালে চিকিৎসার ভর্তি হই। আমাদের মধ্যে লাডলা গুরুতর আহত হওয়া এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছে বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করেছি। আমি এই হামলাকারীদের বিচার চাই, তাদের শাস্তি চাই।
এছাড়া মানববন্ধন অংশ নেওয়া বক্তারা জানান, হামলার ঘটনায় রাতেই সদর থানায় আনিসুর রহমান লাডলা বাদি হয়ে একটি লিখিত ও দিয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়েছে জেলা পুলিশ তবে রহস্যজনক কারণে ঘটনার ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
মানববন্ধনে উপস্থিত বক্তব্যে বক্তারা জানান, লালমনিরহাটের সাংবাদিকদের উপর হামলাকারীদের অতি দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। অন্যথায় আরো বৃহত্তর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে বলে হুমকি দেন তারা।
প্রসঙ্গত গত ১২ আগস্ট বিকেলে লালমনিরহাট কর্মরত প্রথম আলোর প্রতিনিধি আবদুর রব সুজন, যমুনা টিভির আনিসুর রহমান লাডলা, এখন টিভির বকুল এবং ক্যামেরা পার্সন আহসান পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতির আজিজার রহমান মন্ডলের পরিবার এবং ২০-২১জনের একটি সন্ত্রাসী দল হামলা চালিয়ে ক্যামেরা, মোবাইল, ক্যামেরা স্টান্ড ছিনিয়ে নেয় এবং ছিনিয়ে নেওয়া স্টান্ড দিয়েই হামলা করে সবাইকে আহত করে। আহত আনিসুর রহমান লাডলা বর্তমানে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে আর বাকিরা আংশিক সুস্থ হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের ছাড়পত্র দিয়েছে।